Showing posts with label সম্পাদকীয়. Show all posts
Showing posts with label সম্পাদকীয়. Show all posts
আধুনিক যুগের এক নব্য ব্যাধি

আধুনিক যুগের এক নব্য ব্যাধি

 

বিশেষ প্রতিবেদন:

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে অনলাইনের মাধ্যমে জুয়া খেলা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এই সুবিধা আমাদের জীবনে নতুন এক ভয়াবহ সমস্যা—অনলাইন জুয়ার আসক্তি—দিয়ে যাচ্ছে। সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য ও দ্রুত লেনদেনের সুযোগ থাকা কারণে অনলাইনে জুয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে।

অনলাইন জুয়া আসক্তি মানসিক ও আর্থিক দুটো দিক থেকেই ক্ষতিকর। যারা এ আসক্তিতে পড়েন, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক লোকসান, পরিবারে দ্বন্দ্ব, কর্মজীবনে ব্যাঘাত এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হন। তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা অনলাইন জুয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনলাইন জুয়ার আসক্তি প্রতিরোধে দরকার যথাযথ শিক্ষা, সচেতনতা ও আইনানুগ ব্যবস্থা। সরকার ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে যৌথ উদ্যোগে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষকে এই বিপদের বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। পরিবারকেও ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে শিশুরা সঠিকভাবে সময় কাটাতে পারে এবং অনলাইন জুয়ার মাদক থেকে দূরে থাকে।

“অনলাইন জুয়ার আসক্তি একটি মানসিক রোগ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এর জন্য চিকিৎসা ও মনোবিদ্যার সাহায্য প্রয়োজন।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও মাদকাসক্তির পাশাপাশি জুয়ার আসক্তিকে একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।

সচেতনতা, কঠোর নিয়ন্ত্রণ, এবং পরিবার ও শিক্ষাব্যবস্থার সক্রিয় সহযোগিতাই একমাত্র উপায় অনলাইন জুয়ার আসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার। না হলে এটি হবে আমাদের সমাজের এক বড় সংকট।

হলুদ সংবাদিতা: সংবাদপত্রের মূল্যবোধের হানি

হলুদ সংবাদিতা: সংবাদপত্রের মূল্যবোধের হানি

বর্তমান যুগে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবাদ মানুষকে তথ্য দিয়ে থাকে, সচেতন করে তোলে এবং সমাজে ন্যায়ের দাবি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। কিন্তু যখন সংবাদ মাধ্যম তার দায়িত্বকে ত্যাগ করে শুধুমাত্র পাঠক বা দর্শকের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য অসত্য, অতিরঞ্জিত ও প্রলোভনমূলক খবর প্রকাশ করে, তখন সেটি ‘হলুদ সংবাদিতা’ বা ‘Yellow Journalism’ নামে পরিচিত হয়।

হলুদ সংবাদিতার মূল উদ্দেশ্য হলো খবরের সত্যতা বা গুণগত মানের চেয়ে পাঠক সংখ্যা বা ভিউ বৃদ্ধি করা। এতে করে সংবাদমাধ্যম তাদের মূল দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয় এবং সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতিরঞ্জিত শিরোনাম, কৌতূহল সৃষ্টি করা অপ্রমাণিত গুজব, ব্যক্তিগত জীবনে অনধিকার প্রবেশ, এবং কখনো কখনো অপরাধমূলক গল্প সাজিয়ে প্রচার করাই হলুদ সংবাদিতার স্বভাব।

হলুদ সংবাদিতার ফলে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে, মানুষের মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হয় এবং কখনো কখনো তা সামাজিক দাঙ্গা বা বিভেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে সংবাদমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়, যা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য বিপজ্জনক। সংবাদ সত্য এবং দায়িত্বশীল হতে হবে—এটাই সংবাদ মাধ্যমের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য।

আজকের বিশ্বে তথ্যের সরবরাহ অগণিত উৎস থেকে হয়ে থাকে। তাই পাঠককেও সচেতন হতে হবে, প্রাপ্ত খবরের উৎস ও সত্যতা যাচাই করতে হবে। অন্যদিকে, সংবাদমাধ্যমগুলোকে আরও দায়বদ্ধ হতে হবে, sensationalism বা হলুদ সাংবাদিকতা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সমাজের প্রকৃত চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

সংক্ষেপে, হলুদ সংবাদিতা সংবাদপত্রের মর্যাদা ও মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করে। তাই সংবাদ মাধ্যমকে সততা, নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার মানদণ্ড বজায় রেখে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে, যা সমাজে সঠিক তথ্যের সঞ্চার নিশ্চিত করবে এবং গণতন্ত্রের স্থায়িত্বকে আরও মজবুত করবে।